ঐতিহাসিক ফারাক্কা লং মার্চ দিবস আজ ১৬ মে

ঐতিহাসিক ফারাক্কা লং মার্চ দিবস আজ ১৬ মে

উত্তরদক্ষিণ| রবিবার, ১৬ মে ২০২১| আপডেট ১০:৩০

৪৫ বছর আগে অশীতিপর ভগ্ন শরীর নিয়েও এক ঐতিহাসিক লংমার্চের ডাক দিয়েছিলেন মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী । জীবনের শেষ প্রান্তে এসে জাতির বৃহত্তর স্বার্থে ফারাক্কা ব্যারাজ নির্মাণ করে ইন্ডিয়ার পানি প্রত্যাহারের প্রতিবাদে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে এক কাতারে সমবেত হওয়ার ডাক দিয়েছিলেন। তার সে ডাকে সেদিন লাখ লাখ মানুষ সাড়া দিয়েছিল।

বিশ্বজুড়ে তিনি এই সত্যটাকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন যে, আন্তর্জাতিক যাবতীয় আইন-কনভেনশনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এই ব্যারাজের মাধ্যমে বাংলাদেশকে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে যাচ্ছে। দিনটি ছিলো ১৯৭৬ সালে ১৬ মে। সেই ঐতিহাসিক ফারাক্কা লং মার্চ দিবস আজ। রাজশাহীর মাদ্রাসা ময়দান থেকে ফারাক্কা বাঁধ অভিমুখে লাখো জনতার সেই লং মার্চ রওনা হয় ফারাক্কা বাঁধ অভিমুখে। লংমার্চ শেষে কানসাট হাইস্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত বিশাল সমাবেশে বক্তব্য দেন মজলুম জননেতা। সেই থেকে ১৬ মে ফারাক্কা দিবস নামে পরিচিতি লাভ করে।

ইন্ডিয়ার হুগলী নদীতে পানি সরবরাহ এবং কলকাতা বন্দরটি সচল করার জন্যই ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করে ভারত। যার অবস্থান বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা থেকে ১৮ কিলোমিটার উজানে ভারতের ভূখণ্ডে গঙ্গা নদীর ওপরে।

জানা যায়, ফারাক্কা সমস্যার সূত্রপাত ঘটে পঞ্চাশের দশকের গোড়ার দিকে। গঙ্গা নদীর ওপর ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগের খবর জেনে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার এর তীব্র প্রতিবাদ জানায়। পাকিস্তানি প্রতিবাদের উত্তরে ভারত ১৯৫২ সালে জানিয়েছিল যে, গঙ্গার বাঁধ নির্মাণ এখনও অনুসন্ধান পর্যায়েই রয়েছে। ১৯৬০ সালে ভারত প্রথম এ ব্যাপারে পাকিস্তানের সঙ্গে বৈঠকে বসে। এ প্রক্রিয়া চলা অবস্থাতেই ১৯৬১-৬২ সালে ভারত গোপনে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করে। এভাবে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পূর্বেই ১৯৭০ সালে ফিডারখাল ব্যতীত ফারাক্কা বাঁধের নির্মাণ কাজ শেষ করে ফেলে ভারত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর ভারত সরকার ফারাক্কা ব্যারাজ চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সরকারের অনুমতি ছাড়া করতেও পারছিল না। এ ক্ষেত্রে তারা কৌশলের আশ্রয় নেয়। প্রথমে ফিডার ক্যানেলে পানিপ্রবাহের মাধ্যমে পরীক্ষামূলক চালুর কথা বলে মাত্র ৪১ দিনের জন্য (২১ এপ্রিল ‘৭৫-৩১ মে ‘৭৫) ফারাক্কা বাঁধ চালু করা হয়। সেই পরীক্ষামূলক প্রত্যাহারই শেষ পর্যন্ত স্থায়ী হয়।

এর বিরূপ প্রভাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পদ্মা, মহানন্দাসহ দেশের বড় বড় সব নদী নাব্যতা হারিয়ে হয়ে পড়ে পানিশূন্য বালির চরাঞ্চল। ফারাক্কার প্রভাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পদ্মাসহ চার নদীই এখন মৃতপ্রায়।

পরিবেশবাদীরা বলছেন, নদী শুকিয়ে যাওয়ায় জীব-বৈচিত্র্যের ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, নদীতে এখন পানির প্রবাহ নির্ভর করে ভারতের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর। শুষ্ক মৌসুমে পানি পাওয়া যায় না, আবার বর্ষায় হঠাৎ পানি ছেড়ে দিলে বন্যা এবং নদীভাঙন দেখা দেয়।

mashiurjarif

Leave a Reply

Discover more from Daily Uttor Dokkhin

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading