প্রস্তাবিত বাজেট ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ

প্রস্তাবিত বাজেট ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ

উত্তরদক্ষিণ| মঙ্গলবার, ৮ জুন ২০২১| আপডেট ২২:০০

প্রস্তাবিত বাজেট ২০২১-২২ এর ওপর দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির উদ্যোগে এক ওয়েবিনারে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত বাজেট দূরদর্শী এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার জাতীয় লক্ষ্যের সাথে সংগতিপূর্ণ।

মঙ্গলবার (৮ জুন) চেম্বার প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওয়েবিনারে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, ফরেইন ইনভেস্টরর্স চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি রূপালী হক চৌধুরী, বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান, বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফেকচারার্স এসোসিয়েশন সভাপতি মো. আলমগীর কবির, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ’র চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম ও ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের এক্সিকিউটিভ কমিটি ও বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. সেলিম উদ্দিন বক্তব্য রাখেন। এ সময় চেম্বার পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীরসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।

স্বাগত বক্তব্যে চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম কর্পোরেট করহার হ্রাস করা, বিভিন্ন সেক্টরে কর অব্যাহতি ও কর অবকাশ প্রদান সরকারের বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি সহায়ক নির্দেশনা হিসেবে আখ্যায়িত করেন। চেম্বার সভাপতি এফবিসিসিআইসহ অন্যান্য বাণিজ্য সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্প যেমন : বে-টার্মিনাল, জলাবদ্ধতা নিরসন ইত্যাদি বাস্তবায়নে গতিসঞ্চার ও বরাদ্দ বৃদ্ধিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর রক্ষায় কর্ণফুলী নদীতে ক্যাপিটাল ড্রেজিং-এর কোন বিকল্প নেই।

এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বেশি না হলেও সরকারি ব্যয়ের কারণে জিডিপি বৃদ্ধি পেয়েছে। ঘোষিত বাজেটে কর্পোরেট কর হ্রাস এবং অনেক খাতে দেশীয় শিল্পের জন্য কর অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। মহামারির কারণে সরকার ঘোষিত প্যাকেজে বৃহৎ শিল্প মালিকরা উপকৃত হলেও বিভিন্ন ব্যাংকের কারণে এসএমই খাত সেভাবে উপকৃত হয়নি। বর্তমান করদাতাদের ওপর অতিরিক্ত চাপ বৃদ্ধি না করে পরিধি বৃদ্ধি করে করদাতার সংখ্যা বৃদ্ধি করা, পলিসি ও বাস্তবায়ন বিভাগ আলাদা করা এবং বিশ্ব পরিস্থিতি বিবেচনায় করহার আরও যৌক্তিক করার অনুরোধ জানান এফবিসিসিআই সভাপতি।
ফরেইন ইনভেস্টরর্স চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি সভাপতি রূপালী হক চৌধুরী বলেন, এ বাজেট দেশীয় শিল্পবান্ধব। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিদেশি বিনিয়োগ তেমন বৃদ্ধি পায়নি। সরকার অবকাঠামো উন্নয়নে প্রচুর কাজ করছে এবং অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে। তবে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য আইনগত ও নীতিগত দিকে আরও অনেক উন্নয়ন এবং সমন্বয় অপরিহার্য। তিনি টেলিযোগাযোগ খাতে ৫৬ শতাংশ কর নেয়া হচ্ছে উল্লেখ করে তা হ্রাস করার অনুরোধ জানান।

বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, তৈরি পোশাক খাতে ১ শতাংশ প্রণোদনা রপ্তানি বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। দক্ষ জনবলের অভাব পূরণে এ খাতে প্রস্তাবিত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম আরও জোরদার করা প্রয়োজন। নীতিমালাসমূহ ৫-১০ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হলে উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে আগ্রহী হবে। নন-কটন পণ্য তৈরিতে আরও বেশি সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে এবং জিএসপি প্লাস সুবিধা গ্রহণে দ্বি-স্তরভিত্তিক অর্থাৎ ফ্রেবিক্সসহ মূল্য সংযোজন বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়ে প্রণোদনার ওপর ১০ শতাংশ কর প্রত্যাহার করার অনুরোধ করেন বিজিএমইএ সভাপতি।

বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফেকচারার্স এসোসিয়েশন সভাপতি মো. আলমগীর কবির বলেন, দেশে ৩৭ টি সিমেন্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। এ খাত অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে রাজস্ব আয় ও জিডিপিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তিনি অগ্রিম করকে চূড়ান্ত দায় হিসেবে বিবেচনা না করা, ক্লিংকার আমদানিতে শুল্ক হ্রাস এবং ডাবল ট্যাক্সেশন প্রত্যাহার করার অনুরোধ জানান। বন্দর ব্যবহারকারী উদ্যোক্তারা কর দিচ্ছে উল্লেখ করে বন্দর ব্যবহার করেন না এমন উদ্যোক্তাদের করের আওতায় আনার আহ্বান জানান বিসিএমএ সভাপতি।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ’র চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম বলেন, করোনা মহামারির কারণে দেশের পুঁজিবাজার বিপর্যস্ত। প্রথম দিকে প্রায় ৬০ দিন পুঁজিবাজার বন্ধ ছিল। বর্তমানে ব্রোকারেজ হাউজের পরিচালনা ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। কর্পোরেট কর হ্রাস করা হলেও দু’ধরণের কোম্পানির কর পার্থক্য আরও যৌক্তিক হলে শেয়ার বাজারের প্রতি আগ্রহ বেড়ে যাবে। তিনি রাষ্ট্রীয় লাভজনক প্রতিষ্ঠানকে পুঁজিবাজারে আনার পরামর্শ দেন। সিএসই’র অধীনে একটি এসএমই প্রতিষ্ঠান ৭ দশমিক ৫ কোটি মূলধন সংগ্রহের লক্ষ্যে তালিকাভূক্ত হয়েছে উল্লেখ করে পুঁজিবাজারের লভ্যাংশ করমুক্ত করা এবং ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর নির্ভরতা হ্রাস করে শেয়ার মার্কেটে অন্তর্ভূক্ত কোম্পানির সংখ্যা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের এক্সিকিউটিভ কমিটি ও বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. সেলিম উদ্দিন বলেন, বড় বাজেটে বড় ঘাটতি থাকবে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশি উৎস থেকে যথেষ্ট পরিমাণ ঋণ পাওয়া যাচ্ছে। কর অব্যাহতির কারণে রাজস্ব আহরণ কমে গেলে এবং সরকারের ব্যয় বেশি হলে অভ্যন্তরীণ ঋণের ওপর চাপ পড়তে পারে। তিনি মহিলা উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে ৭০ লক্ষ থেকে ১ কোটি টাকা এবং সিএমএসএমই সেক্টরের উৎপাদনভিত্তিক উদ্যোক্তাদের টার্নওভার ৮০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত এবং সেবা ও ট্রেডভিত্তিক উদ্যোক্তাদের টার্নওভার ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত রাখার অনুরোধ জানান। এছাড়া তিনি ব্যক্তিগত কর আয়সীমা ৩ লক্ষ টাকার পরবর্তী ধাপগুলো পুনর্বিন্যাস এবং ক্যাশ রেজিস্ট্রারের ওপর ৫ শতাংশ অগ্রিম কর প্রত্যাহারের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের ক্যাশ রেজিস্ট্রার ব্যবহারে অনুপ্রেরণা প্রদানের অনুরোধ জানান।

mashiurjarif

Leave a Reply

Discover more from Daily Uttor Dokkhin

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading