বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে দ্রুত এটাই প্রত্যাশা

বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে দ্রুত এটাই প্রত্যাশা

কিফায়েত আহমেদ সুস্মিত | রবিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ | আপডেট ১৩:১২

করোনা ভাইরাসের কারণে ১৮ মাস আগে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল বাংলাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ সময়টাতে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষার মাধ্যমে চলে শিক্ষা কার্যক্রম। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মাটির ঘ্রাণ পায়নি কোনো শিক্ষার্থী। দিনের পর দিন ঘরে থেকে তাদের পার করতে হয়েছে অনেকটা একঘেয়েমি জীবন। অবশেষ গত ১২ সেপ্টেম্বর যখন প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিয়েছে সরকার তখন বিশ্ববিদ্যায়ের শিক্ষার্থীরা বেশ আশাবাদী ছিলেন তাদের জন্য। সরকারও ভাবছে কীভাবে ক্যাম্পাস কার্যক্রম দ্রুত চালু করে দেয়া যায়। বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার আশায় বুক বাধছে শিক্ষার্থীরা। আবারও তাদের পদচারণায় মুখরিত হবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার এমন সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সরকার সত্যিই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। সবকিছু খুললেও শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। এ জন্য সরকারকে অনেক সমালোচনা শুনতে হয়েছে। কিন্তু সেই সমালোচনায় কান দেয়নি সরকার। কারণ, মহামারির ভয়ঙ্কর থাবায় একটু ভুল হলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারতো। এমনিতেই বাংলাদেশ অনেক ঘনবসতিপূর্ণ একটি দেশ। তার উপর রয়েছে সচেতনতার অভাব। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী সংখ্যা বেশি। সেখানে পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মানা অসম্ভব হয়ে পড়ে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অতিদ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হবে।

বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি সচেতন। আবার তারা সবচেয়ে বেশি সংবেদনশীল। তাই এমন মহামারি পরিস্থিতির মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া বেশ চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বেশ গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণসহ জরুরি কিছু করণীয় আছে।
বাংলাদেশের প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজস্ব চিকিৎসা কেন্দ্র রয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের কেউ গুরুতর অসুস্থ হলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে নিকটস্থ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এক কথায় বলতে গেলে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা ব্যবস্থা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিলে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতে পারে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব চিকিৎসাকেন্দ্রে কোভিড চিকিৎসা সেবা চালু করা প্রয়োজন। কারণ মহামারি কখন শেষ হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।

অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো সবচেয়ে সংবেদনশীল জায়গা। সেখানে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার কাজটি সহজ হবে না; কিংবা কেউ সংক্রমিত হলে আইসোলেশনের থাকাও হবে কঠিন। ক্যাম্পাসের একাডেমিক ও হলগুলোতে পর্যাপ্ত স্যানিটাইজেশনের ব্যবস্থা রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সঙ্গে শিক্ষকদের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। পাশাপাশি শিক্ষকদের সার্বিক দিক-নির্দেশনায় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের সার্বক্ষণিক মাস্ক ব্যবহারসহ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে।
প্রায় দেড় বছরের বেশি সময় ধরে শিক্ষার্থীরা বাড়িতে বসে আছে। এতে করে তাদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই আবার মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিকল্পও বর্তমানে আছে বলে মনে হয় না। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরাসরি শিক্ষা কার্যক্রম সফলভাবে চালু রাখতে ও গত ১৮ মাসের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শিক্ষার্থীদের বেশ কিছু করণীয় রয়েছে। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম নিয়মিত ও সফলভাবে চালু রাখতে শিক্ষার্থীদের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ রাজনৈতিক গ্র“পিং, প্রভাব বিস্তার, পদ-পদবীসহ নানা কারণে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে মাঝে মধ্যেই শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার ঘটনা প্রায় সবারই জানা। তাই দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় খুলছে সেখানে শিক্ষার্থীদের এই সব কার্যক্রম থেকে সরে এসে ক্যাম্পাসে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রেখে শিক্ষা কার্যক্রম সফলভাবে পরিচালনায় প্রশাসনকে সহায়তা করা বেশ জরুরি।
যেসব শিক্ষার্থী এখনো কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নিতে পারেনি, তাদের অতিদ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভ্যাকসিন নিতে হবে। অন্যদিকে মহামারি পরিস্থিতিতে বিশেষ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া আবাসিক হল থেকে ক্যাম্পাসের বাইরে গিয়ে অহেতুক ঘোরাঘুরি না উচিত। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে যেহেতু শিক্ষার্থীদের সংখ্যা অনেক বেশি তাই এক্ষেত্রে করোনা সংক্রমণ ও অন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার বেশ সম্ভাবনা থাকবে।

লেখক: শিক্ষার্থী

Md Enamul

Leave a Reply

Discover more from Daily Uttor Dokkhin

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading