শেয়ারবাজারে কেলেঙ্কারির পুনরাবৃত্তি হবে না: বিএসইসি

শেয়ারবাজারে কেলেঙ্কারির পুনরাবৃত্তি হবে না: বিএসইসি

উত্তরদক্ষিণ। সোমবার, ১৫ নভেম্বর ২০২১। আপডেট ২১:০৫

১৯৯৬ ও ২০১০ সাল দেশের শেয়ারবাজারে কেলেঙ্কারির জন্য বিনিয়োগকারীদের কাছে দুটি দুর্ভাগ্যের বছর। শেয়ারবাজারে এই দুই কেলেঙ্কারিতে অসংখ্য বিনিয়োগকারী সর্বস্ব খুইয়ে পথে বসেছেন, আত্মহত্যাও করেছেন কেউ কেউ। শেয়ারবাজারে এই ধরনের কেলেঙ্কারির পুনরাবৃত্তি হবে না বলে জাতীয় সংসদের সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

বিএসইসি কারণ হিসেবে বলেছে, বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তাতে বাজারে স্বচ্ছতা-জবাবদিহি যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে বিনিয়োগকারীদের আস্থা। সংসদীয় কমিটির সভাপতি ময়মনসিংহ-৬ আসনের সরকারদলীয় সাংসদ মো. মোসলেম উদ্দিনের সভাপতিত্বে সম্প্রতি বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।

কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের ও সাংসদ ফখরুল ইমাম, বিএনপির গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ এবং সরকারদলীয় সাংসদ মো. দবিরুল ইসলাম, মো. মুজিবুল হক, আবদুল মান্নান ও আরমা দত্ত।

কমিটির সভাপতি মো. মোসলেম উদ্দিন এ বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, সংসদের সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির একটি বৈঠকই হয়েছে। বাজারে কেলেঙ্কারি তো কাম্য নয়। তবে যেসব প্রতিশ্রুতি বিএসইসি দিয়েছে, তার বাস্তবায়ন কতটুকু হয়, সেটি ভালোভাবে দেখা হবে।

সংসদীয় কমিটিকে বিএসইসি জানিয়েছে, শেয়ারবাজারে তারল্য ওঠানামা অনেকাংশে মুদ্রাবাজারের নীতিগত সিদ্ধান্তের ওপরও নির্ভর করে। আর কেলেঙ্কারি বা কারসাজি হয় কতিপয় অসাধু ব্যক্তির যোগসাজশে।

শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি বলেছে, ১ হাজার ৫৯৫টি বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাংক, বিমাসহ ৩৪৩টি তালিকাভুক্ত কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়নে বিএসইসি কাজ করছে।
সংস্থাটির মতে, ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২ হাজার ৩৪৮টি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে বর্তমান কমিশনই নিয়েছে ৬২২টি। এ কারণেই বাজারে শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ভবিষ্যতে বাজারে কী হবে তা আগে থেকে অনুমান করা কঠিন। দেখতে হবে কেলেঙ্কারি বলতে বিএসইসি কী বুঝিয়েছে। অনিয়ম ও কারসাজি রোধে বিএসইসি কতটুকু কী করতে পারবে, সেটিই হচ্ছে বড় কথা। ১০ টাকার শেয়ার কারণ ছাড়াই ৩০ টাকা হয়ে যাচ্ছে, এটাও তো কেলেঙ্কারি।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বাজার থেকে মোট ২ লাখ ৩ হাজার ৪৪৮ কোটি টাকার মূলধন উত্তোলনের অনুমতি দিয়েছে বিএসইসি। এর মধ্যে রয়েছে ১১৪টি কোম্পানির ৮ হাজার ২৭৪ কোটি টাকার প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও), দুই কোম্পানির ৩৩৪ কোটি টাকার পুনঃগণপ্রস্তাব (আরপিও), ৭৪ কোম্পানির ৮ হাজার ৮১৩ কোটি টাকার রাইট শেয়ার ইস্যু এবং অন্যান্য ১ হাজার ৭০৭টি কোম্পানির ১ লাখ ৮৬ হাজার ২৭ কোটি টাকা।

২০১০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪৪৫টি সিকিউরিটিজ ও ৩ লাখ ৫০ হাজার ৮০০ কোটি টাকার বাজার মূলধন ছিল। গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত মোট সিকিউরিটিজ হয়েছে ৬১১টি, যার মধ্যে কোম্পানি ৩৪৩টি। আর বাজার মূলধন ৫ লাখ ৭৬ হাজার ১৫৯ কোটি টাকা। বিএসইসি কমিটিকে জানিয়েছে, কেলেঙ্কারির ঘটনার পুনরাবৃত্তি ও সিকিউরিটিজের মূল্যের দ্রুত ওঠানামা রোধে বর্তমান কমিশন ২৮টি পদক্ষেপ নিয়েছে।

বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. রেজাউল করিম এ বিষয়ে বলেন, কেলেঙ্কারি রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে বিএসইসি এখন অনেক পরিপক্ব। যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং নেওয়া হচ্ছে, সে বিবেচনায় বলা যায় যে শেয়ারবাজারে আগের মতো কেলেঙ্কারি আর হবে না।

সংসদীয় কমিটিকে বিএসইসি বলেছে, রবি, এনার্জিপ্যাক, ওয়ালটনসহ ভালো মৌলভিত্তির ২৩ কোম্পানিকে আইপিওর মাধ্যমে ২ হাজার ৬১৫ কোটি টাকা উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আর বন্ড ছাড়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে ১৬ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকার।

এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়ানো বন্ধ, ২৬ বিমা কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে আসতে কিছু শর্তে অব্যাহতি দেওয়া, লভ্যাংশ দিতে না পারা কোম্পানিতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া ইত্যাদি বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

বৈঠকে উপস্থিত না থাকলেও জাতীয় পার্টির সাংসদ ফখরুল ইমাম বলেন, ‘পুঁজিবাজারে কেলেঙ্কারির ঘটনা আর না ঘটুক সেটা আমরা চাই। দেখতে হবে কোন ভিত্তিতে বিএসইসি কথাগুলো বলেছে।’

Gazi kaium

Leave a Reply

Discover more from Daily Uttor Dokkhin

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading