সাধারণ পরীক্ষার্থীরা কেন বইবে প্রশ্ন ফাঁসের দায়ভার?

সাধারণ পরীক্ষার্থীরা কেন বইবে প্রশ্ন ফাঁসের দায়ভার?

মুহাইমিন আজিম । শনিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ । আপডেট ১০:৩৫

প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা বিভিন্ন সময়েই সামনে এসেছে। আর এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এমন ঘটনা কতটা উদ্বেগজনক ও ভীতিপ্রদ বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, একটি বা দুটি নয়, ফাঁস হয়েছে ছয়টি বিষয়ের প্রশ্নপত্র। আরও উৎকণ্ঠাজনক তথ্য হলো, প্রশ্নফাঁসে যিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন, তিনি একজন কেন্দ্র সচিব, অর্থাৎ যার দায়িত্ব হলো নিরাপদে প্রশ্নপত্র পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া! ফলে নিরাপদে প্রশ্নপত্র পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া যার দায়িত্ব, তিনিই যদি প্রশ্নফাঁসে নেতৃত্ব দেন, তবে তার ভয়াবহতা কীরূপ হতে পারে- তা সহজেই অনুমেয়।

তথ্য মতে, প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চলমান এসএসসি পরীক্ষার ক্ষেত্রে। ঘটনাটি ধরা পড়ে গত মঙ্গলবার। এরপর গত বুধবার চারটি বিষয়- গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, কৃষিশিক্ষা ও রসায়নের পরীক্ষা স্থগিতও করা হয়েছে। বাকি দুই বিষয় উচ্চতর গণিত ও জীববিদ্যার পরীক্ষা নতুন প্রশ্নপত্র ছাপিয়ে নির্ধারিত সময়েই নেওয়া হবে বলে জানা গেছে। আমরা বলতে চাই, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস নিঃসন্দেহে গুরুতর অপরাধ। আর শুধু এবারই নয়, এর আগেও বিভিন্ন সময়ে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা থেকে শুরু করে বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষাতেও প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। সঙ্গত কারণেই যখন এসব প্রশ্নপত্র ফাঁসে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি থেকে শুরু করে, নানা সময়ে শিক্ষক ও ব্যাংক কর্মকর্তার মতো সমাজের অগ্রবর্তী শ্রেণিরও যুক্ত হয়ে পড়ার বিষয়টি বিভিন্ন আলোচনায় এসেছে; তখন সামগ্রিক পরিস্থিতি কতটা দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে, সেটি ভাবনার অবকাশ রাখে। আর এবার তো জানা গেল, প্রশ্নফাঁসে নেতৃত্ব দিয়েছেন, একজন কেন্দ্র সচিব, অর্থাৎ যার দায়িত্ব হলো নিরাপদে প্রশ্নপত্র পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া!

আমরা মনে করি, একের পর এক প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা শুধু ভীতিপ্রদই নয়, বরং সমাজের আশঙ্কাজনক অবক্ষয়েরও নির্দেশক। প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সঙ্গে যারা যুক্ত, তারা একদিকে যেমন জাতির মেধাবী সন্তানদের বঞ্চিত করছে, অন্যদিকে তারা হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। সঙ্গত কারণেই দেশকে, সমাজকে, এই দুষ্টচক্রের হাত থেকে বাঁচাতে হবে। প্রয়োজনে প্রশ্নফাঁস রোধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে।

উল্লেখ্য, এবারে দিনাজপুর বোর্ডের অধীনে প্রায় ১ লাখ ৭৪ হাজার শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় তাদের পরীক্ষার সূচিতে যেমন বিঘ্ন ঘটল, তেমনি এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের মানসিকতার ওপরও পড়বে- ফলে সামগ্রিকভাবে এর ভয়াবহতা এড়ানো যায় না। এটাও আমলে নেওয়া দরকার, স্থানীয় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা জানিয়েছেন, যে ছয়টি বিষয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁসের কথা শিক্ষা বোর্ড স্বীকার করেছে, তার বাইরে আরও একাধিক বিষয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ রয়েছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

এমনটিও জানা গেছে, প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে ভুরুঙ্গামারী থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় উপজেলার নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্রের সচিব মো. লুৎফর রহমান, সহকারী শিক্ষক মো. জোবাইর হোসেন ও মো. আমিনুর রহমান, বিদ্যালয়টির অফিস সহকারী মো. আবু হানিফসহ অজ্ঞাত ১০-১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে কেন্দ্র সচিব লুৎফর রহমান এবং শিক্ষক জোবাইর হোসেন ও আমিনুরকে। তাদের কারাগারেও পাঠানো হয়েছে। আমরা মনে করি, এই ঘটনা আমলে নিয়ে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনে আরও কঠোর হতে হবে।

সর্বোপরি বলতে চাই, দেশে ২০১৯ সালের আগে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠা একটি সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছিল। ২০১৮ সালের এসএসসি পরীক্ষায়ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। ওই সময় কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এছাড়া এবারের এসএসসি পরীক্ষা শুরুর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়েছিল, প্রশ্নপত্র ফাঁসের সুযোগ নেই। কিন্তু যখন দিনাজপুর বোর্ডের ঘটনায় দেখা গেল, পরীক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মাধ্যমেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। এবারের প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা আমলে নিয়ে সব ধরনের পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।

লেখক- কলামিস্ট।

ইউডি/সুস্মিত

Md Enamul

Leave a Reply

Discover more from Daily Uttor Dokkhin

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading