ছোট ডিঙ্গি নৌকায় চড়ে বরশি ফেলে মাছ শিকার করেন তারা

ছোট ডিঙ্গি নৌকায় চড়ে বরশি ফেলে মাছ শিকার করেন তারা

উত্তরদক্ষিণ। শনিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২১ । আপডেট ২২:৫৫

ছোট ডিঙ্গি নৌকায় চড়ে সারিবদ্ধ ভাবে বরশি ফেলে মাছ শিকার করেন তারা। সারাদিনের প্রাপ্ত মাছ ডোলের মধ্যে রেখে পরদিন সকাল বেলা শহরে বিক্রি করতে নিয়ে যান তারা। আগে এখানে বড় বড় মাছ উঠলেও এখন তেমন একটা পাওয়া যায়না। তাই সরকারি সুযোগ সুবিধা পেলে স্ত্রী, পুত্র, পরিবার-পরিজন নিয়ে দু’বেলা দু’মুঠো খেয়ে পড়ে বাচঁতে পারবেন তারা, এমন অভিব্যক্তি দরিদ্র জনগোষ্ঠীভুক্ত এসব মানুষের।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পৌর শহরের পার্শ্ববর্তী চাকামইয়া ইউনিয়নের কাঠালপাড়া গ্রামের রশিদ মুন্সি, হামিদ সরদার, হানিফ হাওলাদার, নুরসায়েদ খান, মঞ্জুরুল হক, ইউসুফ সিকদার, কালাম আকন, নূর ইসালাম হাওলাদার, জাকির আকন, ফারুক আকন, শহীদুল গাজী, কামাল গাজী, সালেহাবাদ এলাকার প্রতিবন্ধী নজরুল, বাবুল ব্যাপারী, বারেক ব্যাপারী, শামসুদ্দিন, চুন্নু সিকদার, কড়ইবাড়িয়া এলাকার দুই পা বিহীন প্রতিবন্ধী জালাল ফকির, আফজালসহ গান্ধাপাড়া, আনিপাড়া এবং চাউলাপাড়া এলাকার ৩৪ জন মাছ শিকারী এখানে মাছ ধরতে আসে।

আর এ মাছ ধরেই চলে তাদের জীবন জীবিকা। গলদা চিংড়ি, গুলসা, বগনি, কোড়াল, গাঁগড়া, পাঙ্গাশ, রুই, কাউন, পোয়া, বাইলা সহ নানা প্রজাতির মাছ পাওয়া যায় এখানে। সারাদিন মাছ শিকার করে তারা চারশত থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করে থাকেন। কোন দিন কোন মাছ পাননা, আবার বড় মাছ পেলেতো কথাই নেই।

ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে সারিবদ্ধভাবে বরশি দিয়ে মাছ স্বীকার করছেন

কাঁঠালপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মৎস্যজীবী আবদুল হামিদ সরদার জানান, বয়স হয়ে গেছে তাই নদীতে মাছ শিকার করতে পারিনা। তিন বছর ধরে এখানে বরশি দিয়ে মাছ শিকার করছি। এক কেজি মাছ পেলে চারশো থেকে পাঁচশো টাকায় বেঁচতে পারি। তিনি আরও জানান, এখন পর্যন্ত কোনো জেলে কার্ড পাইনি। গত বছর মৎস্য কর্মকর্তা এসে নাম নিয়ে গেছে, আর কোন খবর নেই।

মাছ শিকারে আসা দুই পা বিহীন প্রতিবন্ধী জালাল ফকির জানান, সংসার চালাতে নৌকায় বসে বরশি দিয়ে মাছ শিকার করছি। অন্য কোন কাজ করতে পারিনা। সকাল হলে কড়ইবাড়িয়া থেকে আমার স্ত্রী নৌকায় উঠিয়ে দেয়, আবার বড়িতে গেলে তুলে নেয়।

নূর মোহাম্মদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আইয়ুব আলী জানান, একসময় এদের কাছ থেকে বড় সাইজের কোড়াল, কাউন এবং বগনি মাছ কিনে নিতাম। এখন তেমন পাওয়া যায়না।

তিনি আরও জানান, এদের অধিকাংশ সন্তানেরা আমার বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। আমরা যতটুকু সম্ভব তাদের সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকি।

চাকামইয়া ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির কেরামত হাওলাদার জানান, আমার ইউনিয়নে এই সকল মৎস্যজীবীদের সম্পর্কে আমি অবগত আছি। এরা যাতে নির্বিঘ্নে মাছ শিকার করে জীবীকা নির্বাহ করতে পারে সে ব্যাপারে আমরা সহযোগিতা করছি।

তিনি আরও জানান, সরকারি কোন সুযোগ সুবিধা আসলে এদের পূনর্বাসনসহ অন্যান্য সুবিধা দেয়া হবে।

এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহার কাছে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান জানান, সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে বর্তমানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীভুক্ত (কাঁসারি, বাঁশ ও বেত শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত, কামার, কুমার, তাঁতী, নাপিত, বাউল শিল্পী) ১০টি পেশার মানুষের জরিপ চলছে। এদের মধ্যে এইসব পেশার মানুষের জন্য তালিকাভূক্ত করা যাবে।

তিনি আরও জানান, এদের মধ্যে উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দাদের মধ্যে যারা প্রতিবন্ধী আছে তাদের সুযোগ সুবিধার আওতায় আনা সম্ভব হবে।

Gazi kaium

Leave a Reply

Discover more from Daily Uttor Dokkhin

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading