একটি মৃত্যুদণ্ডের পর সিঙ্গাপুরে যেভাবে ছড়াল প্রতিবাদের স্ফুলিঙ্গ
উত্তরদক্ষিণ । মঙ্গলবার, ৩১ মে ২০২২ । আপডেট ১২:৫৫
তান মেই কিয়ানের ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলে একটিই ছবি আছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে তিনি ও তার দুই বন্ধু সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্টের হাতে একটি চিঠি তুলে দিচ্ছেন। সাত বছর আগে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত দাচিনামূর্তি দারিয়াহ নামে ৩৬ বছর বয়সী এক যুবকের দণ্ড মওকুফের আবেদন করা হয়েছে ওই চিঠিতে। তার অপরাধ ছিল সিঙ্গাপুরে ৪৪ গ্রাম হেরোইন পাচার করা। তান বলেছেন, এখানে মিডিয়া ব্যাপকভাবে সেন্সর করা হয়। তাই আমাদের মতামত প্রকাশ করার সুযোগ সীমিত।
কিন্তু মালয়েশিয়া থেকে সিঙ্গাপুরে মাদক চোরাচালানের দায়ে নাগেন্থরান কে ধর্মলিংহাম নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড গত মাসে কার্যকর হওয়ার পর পরিস্থিতি বদলে গেছে। নাগেন্থরানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পর সিঙ্গাপুরের সচেতন তরুণ প্রজন্ম সোশ্যাল মিডিয়াতে কথা বলা শুরু করেছে। সিঙ্গাপুরের জন্য এটা খুব একটা স্বাভাবিক বিষয় নয়। রাজনৈতিকভাবে এ ধরনের বিরোধিতার খুব একটা সুযোগ নেই সেখানে। নাগেন্থরানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার আগের দিনগুলোতে হং লিম পার্কে প্রায় ৪০০ জন জড়ো হয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে এটা ঠেকানোর চেষ্টা করেন। এই হং লিম পার্ক হলো সিঙ্গাপুরের একমাত্র জায়গা যেখানে পুলিশের পূর্বানুমতি ছাড়াই বিক্ষোভের অনুমতি রয়েছে।
এই প্রতিবাদের আয়োজক জুলোভান হোয়াম আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, নাগেন্থরানের ঘটনা সিঙ্গাপুরের অনেক মানুষকে ক্ষুব্ধ করেছে এবং সবাই এটা উপলব্ধি করেছে যে আমাদের বিচার ব্যবস্থা কতটা নির্মম। ৪৩ গ্রাম হেরোইন উরুতে বেঁধে রাখা অভিযোগে তাকে এই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
নাগেন্থরানকে ফাঁসি দেওয়ার কয়েক মাস আগে, তার আইনজীবী এবং পরিবার তার বুদ্ধিবৃত্তিক অক্ষমতা ছিল উল্লেখ করে ক্ষমা চেয়ে ও দণ্ড কমানোর জন্য আপিল করেছিলেন। দেখা গেছে, তার আইকিউ ছিল ৬৯, যা আন্তর্জাতিকভাবে ‘লার্নিং ডিজ্যাবিলিটি’র স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু আদালত ওই আবেদন খারিজ করে দিয়ে বলে, অপরাধ করার সময় তিনি জেনে বুঝেই করেছেন যে তিনি কী করছেন।
সিঙ্গাপুরের জন্য এটা খুব একটা স্বাভাবিক বিষয় নয়। রাজনৈতিকভাবে এ ধরনের বিরোধিতার খুব একটা সুযোগ নেই সেখানে। করোনা মহামারির কারণে দু’বছর কোনো মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছিল না সিঙ্গাপুর। তখন মনে করা হয়েছিল যে নাগেন্থরানের ভাগ্য হয়তো বদলাতে পারে। কিন্তু ২৭ এপ্রিল তার দণ্ড কার্যকর করা হয়। সিঙ্গাপুরের বেশিরভাগ মানুষ মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে থাকলেও নাগেন্থরানের মৃত্যুদণ্ড নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। সিঙ্গাপুরের সরকার বলেছে যে দেশটির কঠোর মাদকবিরোধী আইন ও মৃত্যুদণ্ডের বিধান দেশটিকে এশিয়ার অন্যতম নিরাপদ স্থানে পরিণত করেছে।
ইউডি/অনিক