আত্মহত্যা রুখতে শিক্ষা কার্যক্রম প্রয়োজন

আত্মহত্যা রুখতে শিক্ষা কার্যক্রম প্রয়োজন

কিফায়েত সুস্মিত । শনিবার, ০৬ আগস্ট ২০২২ । আপডেট ১২:৩০

আত্মহত্যা বা মনস্তাত্ত্বিক ব্যাধি আজকাল বিশ্বের তরুণ সমাজের জন্য ভীষণ ভয়ংকর সমস্যা। বর্তমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশানুরূপ ফলাফল ও ধর্মান্ধতার মধ্যে সবচেয়ে বেশি মনস্তাত্ত্বিক দুর্ভাগা সৃষ্টি হচ্ছে শিক্ষাপ্রাপ্ত সমাজে। বেকারত্ব-যৌতুক-নির্যাতন ও খারাপ বন্ধুত্বের ছোঁয়ায় অনুরূপ ব্যাধি। জীবন থমকে বাড়ছে আত্মহত্যা! কি লাভ এ আত্মহননে? জীবন পরিচালনার পথে ছুটে চলা দুর্গন্ধময় তারুণ্যের অধঃপতনের শ্বাস-প্রশ্বাসে যেন দীর্ঘতর ছোঁয়া। গরিব থেকে ধনী সুদদাতা থেকে ঋণী বিশ্বের গোলকধাঁধায় আত্মহনন সমস্যা থেকে কেউ মুক্ত তা বলা যায় না। সভ্যতার সাথে সাথে অপরাধও ডিজিটাল হচ্ছে।

গত অর্ধশত বছরে বিশ্বের উন্নত যেসব দেশ রয়েছে সেসবে আত্ম্যহত্যার প্রবণতা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি হয়েছে। বাংলাদেশে এ হার দুই দশমিক ছয় শতাংশ। এখানে প্রতিদিন গড়ে ৩০ জন করে আত্মহনন করেন। প্রতিবছরের এ হার দিনকে দিন বেড়ে চলেছে। পত্রিকায় ও বিভিন্ন তথ্যসূত্র গবেষণায় জানা যায় বাংলাদেশে গত ছয় বছরে ৬০ হাজারের উপরে মানুষ আত্মহত্যা করেছে। মহানগরের মেট্রোপলিটন পুলিশের গবেষণায় বাংলাদেশে ২০১৬ সালে আত্মহত্যা করেছে ১০ হাজার সাতশ ৪৯ জন। তার পরবর্তী বছরের ১০ হাজার দুইশ ৫৬ জন। ২০১৮ সালে এ সংখ্যা দশ পেরিয়ে ১১ হাজার। ২০১৯ সালে এ হার ততটা গতানুগতিক হিসাব না থাকলেও করোনার সময় ২০২০ সালে গত ও এবছর যথা দুই বছর মিলে ১৪ হাজার চারশ ৩৬ জনের তথ্য পাওয়া যায়। যাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মেয়েদের আত্মহত্যার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় কিন্তু বর্তমান মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের আত্মহত্যা প্রায় দ্বিগুণ।

২৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর একটি গবেষণায় উঠে এসেছে ‘বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ২৮ শতাংশ শিক্ষার্থীর মাথায় জীবনের কোন না কোন সময় আত্মহত্যা করার চিন্তা এসেছে।’ ফেসবুক লাইভে এসে আত্মহত্যাসহ চলতি ও বিগত বছরের বিভিন্ন মর্মান্তিক ঘটনা দেশবাসীকে যন্ত্রণাদগ্ধ করেছে। দরিদ্র দেশগুলোতে আত্মহত্যার পরিসংখ্যান অনেক বেশি থাকলেও ডিজিটাল ও উন্নত দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আত্মহত্যা বেশি হওয়া দেশ জাপান। গত এক দশকে জাপানের আত্মহত্যা কমতে নিম্নগামি হলেও করোনা মহামারি চলাকালে এ পরিসংখ্যান ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। জাপান দেশে যে মৃত্যু করোনার চেয়ে প্রায় দশ গুণ।

তথ্যমতে, সমগ্র বিশ্বের মধ্যে বর্তমান গায়ানায় আত্মহত্যা বেশি হয়। পুরো বিশ্বজুড়ে যে আত্মহত্যা হয় তার থেকে প্রায় চারগুনে মতো বেশি আত্মহনন এ দেশে। মাদকসেবন ও বিষাক্ত কীটনাশকের সহজলাভ্যতা এবং দারিদ্রতায় এ দেশের আত্মহত্যার বিশেষ কারণ হিসেবে বিবেচনা করা যায়। বিজ্ঞদের গবেষণা মতে ‘গায়ানা’ এ বছরের লাখের উপরে আত্মহত্যা হয়। আনুমানিক এর গড় সংখ্যা বলা হয়েছে প্রতিবছর এক লাখ ৪৪ হাজার। সীমাবদ্ধতা এড়ানো ও মানবধিকার প্রতিষ্ঠায় এবং আর্থসামাজিক অবস্থার চাপে উত্তর কোরিয়ায় বছরের ১০ হাজারের বেশি মানুষ আত্মহত্যা করেন। জানা যায়, এ দেশের শাসকদের অত্যাচার সহ্য না করতে পেরেও পুরো পরিবার আত্মহত্যা করেছে এমন ঘটনা নিয়মিত ঘটছে। অন্যদিকে পাশের দক্ষিণ কোরিয়ায় সামাজিক চাপ অত্যন্ত বেশি, এখানে পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যার কারণে বিষপানে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায়।

দক্ষিণ এশিয়ায় প্রায় প্রতিটি দেশে সামাজিক ও আর্থিক সমস্যার কারণে আত্মহননের পরিসংখ্যান অনেক বেশি। বাংলাদেশে অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় বর্তমানে কম। প্রতিবছর দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ায় লাখে ১৩ জন আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। বর্তমান সময়ের গবেষণা বলে মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুর চেয়ে ‘মনস্তাত্ত্বিক ব্যাধি’ নিয়ে অস্বাভাবিক মৃত্যুর কারণ হিসেবে পরিসংখ্যানে অন্যতম বিবেচিত ‘আত্মহত্যা’। মূলত বাংলাদেশে আত্মহত্যার দিন দিন বাড়ছে। এ দেশে পরীক্ষায় অকৃতকার্য বা আশানুরূপ ফলাফল না আসলে আত্মহনন ঘটায় শিক্ষার্থীরা। গ্রাম গঞ্জে যৌতুক ও নির্যাতন সবচেয়ে বেশি ঘটে থাকে।

বেকারত্বের কারণে যুবসমাজ ঘটাচ্ছে অপ্রত্যাশিত এসব ঘটনা। ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান না থাকায় বা ধর্মান্ধতার কারণেও আত্মহত্যায় অনেকে ধাবিত হয়। যদিও বাংলাদেশে রয়েছে প্রচুর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তবু মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা সমাধানে পরামর্শ ও তা অনুযায়ী স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা অসন্তোষজনক। শিশু থেকে প্রবহমান কালে জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে এ বিষয়ে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। অতি কম সময়ের মধ্যে ‘আত্মহনন’ বিরুদ্ধে তৃণমূলে ব্যবস্থা, শিক্ষা-প্রশিক্ষণ ও কার্যক্রম গ্রহণ করা না হলে এ সমস্যার ভবিষ্যতে আরো ভীষণ ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে, কোন সংশয় ছাড়া তা অনুভব করা যায়।

লেখক- গণমাধ্যমকর্মী

ইউডি/অনিক

melongazi

Leave a Reply

Discover more from Daily Uttor Dokkhin

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading