জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা’র, ‘অপ্রত্যাশিত উত্থান’!

জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা’র, ‘অপ্রত্যাশিত উত্থান’!

উত্তরদক্ষিণ । বুধবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০। আপডেট ‌১৭:৪৪

শিনজো আবে এতদিন ধরে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। বিশ্বের প্রায় সব অঞ্চলের মানুষের কাছেই তার মুখটি পরিচিত হয়ে উঠেছিল। সম্ভবত সবাই তার নামের উচ্চারণও জানতেন। এখন জাপানের প্রধানমন্ত্রী বদলে গেছে। আবের স্থলাভিষিক্ত ইয়োশিহিদে সুগা কী তার পূর্বসূরির মতো এতটা পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাবেন? তার নামের উচ্চারণও কি একইভাবে সবাই জানবে?

বিবিসি জানিয়েছে, একমাস আগেও সম্ভবত খুব কম লোকই জাপানে কী ঘটতে যাচ্ছে সে বিষয়ে ধারণা করতে পেরেছিল। আবের পদত্যাগ, বিশেষ করে টোকিও অলিম্পিকের আগে তিনি পদত্যাগ করবেন- এটি কারও প্রত্যাশাতেই ছিল না। এই টোকিও অলিম্পিকের আয়োজন ছিল আবের অতি আকাঙ্ক্ষিত। আবের প্রস্থানের চেয়েও সুগা যে তার স্থলাভিষিক্ত হবেন, এ ধারণা করা লোকের সংখ্যা ছিল আরও কম।

৭১ বছর বয়সী সুগা পরিচিত ছিলেন আবে’র ‘ফিক্সার’ হিসেবে; যার কাজ পর্দার আড়ালের থেকে দায়িত্ব সমাধা করা। সম্প্রতি তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, নিজেকে কী আপনি চমৎকার লোক মনে করেন? সুগা’র উত্তর, ‘আমি তাদের কাছে খুবই চমৎকার, যারা তাদের কাজ ঠিকঠাক করতে পারে।’

জনসমক্ষে তাকে খুব একটা হাসতে দেখা যায় না। সরকারি মুখপাত্র হিসেবেও তিনি তেমন আকর্ষণীয় নন। প্রশ্ন পছন্দ না হলে সেসব বিষয়ে উত্তর দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় জাপানি সাংবাদিকদের কাছে সুগা’র ডাকনাম ‘লৌহ প্রাচীর’।

দীর্ঘদিন ধরে টোকিওর বাসিন্দা অর্থনীতিবিদ জেসপার কোলের মতে, পর্দার আড়ালে থেকে যারা লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করেন তাদের হাতে অন্য কোনো বিকল্প না থাকাতেই তারা সুগাকে দলীয় নেতৃত্বে এনেছেন। এলডিপির ভেতরে ধোঁয়াশাপূর্ণ কক্ষে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে এটি ঠিক হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বেছে নেওয়ার এ প্রক্রিয়ায় জাপানের জনগণের বলার কিছু ছিল না। শেষ পর্যন্ত, আপনি আপনার দলের জন্য তখনই ভালো কিছু নিয়ে আসবেন, যখন আপনি নির্বাচনে জিতবেন। যে কারণে সুগা ব্যাপক চাপে থাকবেন। তাকে দলের কাছে, জাপানের জনগণের কাছে, তিনি যে প্রধানমন্ত্রীত্বের যোগ্য, তা প্রমাণ করতে হবে।

সুগা’র যে রাজনৈতিক দক্ষতা নেই, তা নয়। জাপানের মুখ্য মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে তিনি তার পূর্বসূরীদের চেয়েও অনেক বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন করেছেন। দৃঢ়তা ও শৃঙ্খলার জন্য তার খ্যাতি আছে। জাপানের ‘বাইজেন্টাইন’ আমলাতন্ত্র কীভাবে কাজ করে, সে সম্বন্ধেও তিনি ব্যাপক ধারণ রাখেন। কিন্তু এসব গুণ কি তাকে নির্বাচনে জেতাতে পারবে?

টোকিওর সোফিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কোইচি নাকানোর মতে, সুগা’র এসব গুণ নির্বাচনে জেতার জন্য যথেষ্ট নয়। তিনি ক্ষমতার কেন্দ্রে উঠে এসেছেন, কেননা তার রয়েছে গণমাধ্যমসহ বিরোধীদের ভয় দেখানো, পর্দার আড়ালে হওয়া চুক্তিগুলোতে প্রভাব বিস্তার করা এবং আমলাতন্ত্রকে ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণের রাজনৈতিক দক্ষতা। কিন্তু যখন দলের মুখ হয়ে ওঠার বিষয় থাকবে, যখন এক বছরের মধ্যে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের নির্বাচন দেওয়া প্রয়োজন হয়ে পড়বে, তখন তিনি আর অতটা যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন না। কেননা তিনি খুব একটা বাকপটু নন।

সুগা’র বাগ্মিতার ঘাটতি দেখা গেছে- সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দলের নেতৃত্ব নির্বাচনের ভোটে জয়ী হওয়ার পর দেওয়া ভাষণেও। অনভ্যস্ত টানে, দীর্ঘ বিরতি নিয়ে তিনি সমর্থকদের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন- আমলাতন্ত্রের স্বার্থান্বেষী ভূমিকা ও অন্ধ আনুগত্যের নজির গুড়িয়ে দেওয়ার।

তবে নতুন প্রধানমন্ত্রীকে এখনই বাতিলের খাতায় ফেলতে রাজি নন জেসপার কোল। সুগাকে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন বলেই জানেন, ৭১ বছর বয়সী এ ব্যক্তি নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে কতটা সচেতন। তিনি এমন মানুষ, যিনি ভোর ৫টায় ঘুম থেকে উঠেন এবং ১০০বার উঠ-বস করেন; তারপর সব খবরের কাগজ পড়ে ফেলেন। ভোর সাড়ে ৬টার মধ্যেই তিনি ব্যবসায়ী, উপদেষ্টা এবং বাইরের সব অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে বৈঠক শুরু করে দেন। তিনি স্পঞ্জের মতো শুষে নেন এবং দেশের জন্য সবকিছুই করতে চান। তিনি ক্ষমতার সঙ্গে আসা চাকচিক্য কিংবা জৌলুসের ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহী নন।

বিশ্লেষকদের নেতিবাচক অনুমানগুলো কোনোভাবেই সুগার জন্য স্বস্তিদায়ক হতে পারে না। তাই ৭১ বছর বয়সী জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রীকে অনেক কিছুই স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রমাণ করে দেখাতে হবে।